Friday, December 9, 2016

Short-nosed vine snake

লাউডগা সাপ : 

 ইংরেজি নামটি Short-nosed vine snake হলেও দেখতে লাউয়ের কচি ডগার মত চিকন ও সবুজ বলে একে লাউডগা সাপ বলে । খাদ্য বা অন্য কোন প্রয়োজনে দেহের দুইদিক চ্যাপ্টা করে বাতাসের উপর ভড়করে উঁচু গাছের ডাল থেকে নিচু গাছের ডালে লাফ দিয়ে চলাফেরা করে বলে এর আরেকটি নাম পঙ্খীরাজ সাপ। কোন কোন অঞ্চলে একে পাতালতা সাপও বলে, হাল্কা পাতলা গড়নের এই সাপটি লতা পাতার উপর দিয়ে খুবিই দ্রুত চলাচল করে বলে হয়তো এই নামটি হয়েছে। প্রকৃতির রঙে রাঙানো সাপটি তাই ক্যামোফ্রেজ ছারাই প্রকৃতির সাথে এমন ভাবে মিশে থাকে যা চিনার কোন উপায় থাকে না। সাপটির বৈজ্ঞানিক নাম Ahaetulla prasina, Colubridae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত।


 আকার ও আকৃতিঃ  এরা লম্বায় ১৬০ থেকে ১৯৭ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এদের দেহের রঙ সবুজ ,জলপাই সবুজ ও হাল্কা বাদামী হয়ে থাকে । সাপটির দেহ লম্বা ও চিকন, মাথাটি সরু অনেকটা সুচাল আকৃতির। 


  স্বভাবঃ  লাউডগা সাপ শান্ত স্বভাবের, তবে এরা কিছুটা বিষাক্ত হলেও এদের বিষ মানুষের জন্য ক্ষতিকর না। এদের বিষের প্রয়োগে আজ প্রজন্ত কোন মানুষ মারা যায় নাই। এরা সাধারণত মাটিতে নামে না ।


 বসবাসঃ  লাউডগা সাপ সাধারণত বনাঞ্চল,বাশ ঝাড় এবং গ্রামের ঝোপ ঝাঁড়ে দেখতে পাওয়া যায়।


 প্রজননঃ অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মত এরা সরাসরি বাচ্চা প্রসব করে।মে ও জুন মাসে এরা একসাথে চারটি থেকে দশটি পর্যন্ত বাচ্চা প্রসব করে থাকে।


 খাদ্যঃ  এদের খাদ্য তালিকাতে আছে পোকামাকড় ,টিকটিকি,গিরিগিটি, ব্যাঙ,ছোট পাখি ইত্যাদি ।


 প্রকৃতিতে এদের ভূমিকাঃ বাস্তুতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে প্রকৃতির এক অসাধারণ ভূমিকা পালন করে লাউডগা সাপ । কৃষক মাচার উপর যেই সবজি চাষ করে,তাতে কীটনাশক ব্যাবহার করে পোকামাকড় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য । এই কীটনাশক যেমন সবজি খাদ্য মান নষ্ট করে আবার সবজি মাধ্যমে মানুষের শরীরে ডুকে শাররিক, মানসিক ও আর্থিক ভাবে ক্ষতি গ্রস্থ করে। অথচ লাউডগা সাপ পোকামাকড় খেয়ে কীটনাশক মুক্তো সবজি উৎপাদনে এক অসাধারণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া কৃষক কীটনাশকের পিছনে যে পরিমাণ অর্থ বেয়্ করে যদি ঐ সবজি ক্ষেতেলাউডগা সাপের উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায় তাহলে কৃষক আর্থিক অপচয় থেকেও রক্ষা পাবে। এতে সবজির উৎপাদন খরচও কমে যাবে।


গ্রাম অঞ্চলের অতি পরিচিত একটি সাপ হল লাউডগা যা এক সময় বাংলাদেশের সব জাগায় দেখা মিলত। নির্বিচারে বন জঙ্গল ধ্বংসকরা,বাশ ঝাড় কেটে ফেলা গ্রামের ঝোপ জাড় পরিষ্কার করার ফলে এরা আশ্রয়হীন হয়ে পরচ্ছে, তাছারা মানুষের সাপের প্রতি অজ্ঞতা ও অযথা আক্রোশের কারণেই লাউডগা সাপ প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে ।মানুষের এবং প্রকৃতির এক অতি গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু সাপ। প্রকৃতি থেকে সাপ হারিয়ে যাওয়ার পরিণাম কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা আমরা অনেকই জানিনা। তাই লাউডগা সাপ উৎপাদন, সংরক্ষন ও প্রকৃতি থেকে সাপের বংশ বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হবে এবং আমাদের দেশের সকল মানুষকে লাউডগা সাপ সহ সকল প্রকার সাপ সম্পর্কে সঠিক ধারনা প্রদান করে সাপ সংরক্ষণ করতে হবে যা পরিবেশ, কৃষি ও কৃষকের জন্য অতান্ত উপকারী।


বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল ১ অনুযায়ী প্রজাতিটি সংরক্ষিত। IUCN এই প্রজাতিটিকে Least concern বা ন্যূনতম বিপদ গ্রস্থ বলে ঘোষণা করেছে।

 তথ্যসূত্রঃ 
১. তফসিল - ১ ( রক্ষিত বন্যপ্রাণী ) উভচর ,  বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, জুলাই ১০,২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, ক্রমিক নং -৩৯, পৃষ্ঠা- ১১৮৪৪৪ । 
২. Amphibians and Reptiles of Bangladesh - M. Kamrul Hasan , M. Monirul H. Khan , M. Mostafa Feeroz
৩. A Guide To Wildlife - M. Monirul H. Khan 
৪. The IUCN Red List of Threatened Species .

1 comment:

  1. লতাসাপ, বেজীমুখি, পাতসাপ,

    ReplyDelete